নিজস্ব প্রতিনিধি
দীর্ঘ ১৬৫ দিন চিকিৎসাধীন পর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার (১১ই জানুয়ারি) বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় ফিরেন তিনি।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপার্সন বাসায় ফিরেছেন।
গত বছরের ৯ই আগস্ট হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরী ভিত্তিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। এরপর থেকে একটানা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। গত ২৬শে অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেট ও বুকে পানি বৃদ্ধি এবং লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শন্ট (টিআইপিএস পদ্ধতি) নামে পরিচিত হেপাটিক পদ্ধতি সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের চিকিৎসক হামিদ রব, ক্রিস্টোস জর্জিয়াডেস ও জেমস পি এ হ্যামিল্টন গত ২৫শে অক্টোবর বাংলাদেশে এসে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে টিআইপিএস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন। টিআইপিএস এমন একটি পদ্ধতি যা পোর্টাল শিরাগুলোকে নিম্ন চাপযুক্ত সংলগ্ন রক্তনালীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে একটি স্টেন্ট (টিউব) সন্নিবেশ করে। এটি রোগাক্রান্ত লিভারের মাধ্যমে প্রবাহিত রক্তের চাপ উপশম করে এবং রক্তপাত এবং তরল ব্যাকআপ বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারে। একটি টিআইপএস পোর্টাল শিরা (পোর্টাল হাইপারটেনশন নামে পরিচিত) এর উচ্চ রক্তচাপকে উপশম করে যা প্রায়শই লিভার সিরোসিসের বিন্যাসে ঘটে।
২০২১ সালের নভেম্বরে লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর থেকেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা। ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
জরুরী আইনের সময় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক বানোয়াট মামলা দেওয়া হয়েছিল। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে কথিত দুর্নীতি অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি ফরমায়েশি রায় দিয়ে নির্জন কারাগারে বন্দি করা হয় খালেদা জিয়াকে। জেলা জজের বিশেষ আদালত ফরমায়েশি রায়ে ৫ বছরের সাজা দিয়েছিল। পরবর্তীতে জামিন চাইতে গেলে পুরো আপিল শুনানী করে কারাদ- বাড়িয়ে দেয় হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এনায়েতুর রহিম। একই বছর আরেকটি মামলায় তাকে ফরমায়েশি রায়ে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২০ সালে করোনা ভাইরায়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তির জন্য আবেদন করা হয় ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশেষ কিছু শর্তে কারাগারের পরিবর্তে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয় শেখ হাসিনার সরকার। এতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে তিনি গুলশানের বাসায় থাকার সুযোগ পান।
Leave a Reply